মানসিক স্বাস্থ্য একজন মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য। যা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদযাত্রায় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। প্রকৃত পক্ষে একজন মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপন হলো মানসিক স্বাস্থ্য। মেধা ও বুদ্ধিতার মাধ্যমে সমাজ জীবনে নিজের অস্তিত্ব টিকে রাখতে পাড়ার ক্ষমতা। মন ও দেহ যদি ঠিক ভঙ্গিতে কাজ না করে তাহলে জীবনের গতি থেমে যায়। মানুষ তার আপন গতি হারিয়ে ফেলে। আমাদের ওয়েবসাইটে মানসিক স্বাস্থ্য প্রডকাস্ট প্রতি সপ্তাহে দেখানো হয়। আজকে আমি আপনাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
সূচিপত্র-
মানসিক স্বাস্থ্য কি?
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে আমাদের মন, আচরণ এবং আবেগের সুস্থতাকে বোঝায়। এটি শুধু রোগ না থাকা নয়, বরং জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার ক্ষমতা, সুখ অনুভব করা, অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দেওয়ার ক্ষমতা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিজের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সাথে অন্যকে বোঝার ক্ষমতাকে বোঝায়।
কেন এটি জীবনের জন্য অপরিহার্য?
মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আমাদের শরীরিক স্বাস্থ্যের সাথে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। একটি সুস্থ মন একটি সুস্থ শরীরকেই নিশ্চিত করে। আমাদের মনের দরজায় এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ জাল। মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীনের জন্য অপরিহার্য বিষয়টি বুঝতে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ করুন। আরও একটি কথা আমাদের সাইটে নিয়মিতভাবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পডকাস্ট দেওয়া হয়।
দৈনন্দিন জীবনঃ
মানসিক সুস্থ থাকলে আপনি প্রতিদিনের কর্ম গুলো ভালোভাবে করতে পারবেন। কোন কাজের বিষয়ে সঠিক ধারণা এবং সেটি সমাপ্ত করতে পারবেন। কোন কাজে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাবে না। ধরা যাক আপনি একজন শিক্ষক। আপনার দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ ছাত্র পড়ানো। যদি আপনার মনটা সতেজ থাকতে হবে। মন সতেজ না থাকলে আপনি কাজটি সহজেই করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে তালিকা অকারে নিতে দেখানো হলো।
মানসিক রোগের লক্ষণ শুরুঃ
মেজাজ বা রাগঃ
মেজাজ বা রাগ হলো মানুষের একটি প্রাকৃতিক আবেগ যা সাধারণত ক্ষোভ, হতাশা বা অবিচার থেকে তৈরি হয়। এটি বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যেমন হৃৎস্পন্দন বাড়ানো, রক্তচাপ বৃদ্ধি, এবং উত্তেজনার অনুভূতি। রাগ সব সময় খারাপ নয়—এটি প্রায়শই মানুষকে প্রতিরোধ করতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বা ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, নিয়ন্ত্রণহীন রাগ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
উদ্বেগ বাড়ানোঃ
দীর্ঘস্থায়ী রাগ মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বাড়াতে পারে। এ ধরনের রাগ মানসিক শান্তি নষ্ট করে এবং অস্বস্তি তৈরি করে। শুধু তাই নয় নিজের উপর নিয়ন্ত্রয়ণ হারিয়ে ফেলে ফলে সহজেই মানসিক বিপর্যয় তৈরি হয়। যা মানুষের জীবন-যাপনের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। সবচেয়ে বড় কথা এটি মানুষের জন্য খুবই উপকারী।
সম্পর্কের অবনতিঃ
কথায় আছে রেগে গেলন তো হেরে গেলেন। ঠিক আপনার যদি অধিক পরিমাণে রাগ থাকে তাহলে আপনি আপনার সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সুখী হতে পারবেন না। রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে।
শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর রাগের প্রভাবঃ
অতিরিক্ত রাগ আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, নিয়ন্ত্রণহীন রাগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, এবং এমনকি মাথাব্যথা বা নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয় এই রাগে ফলে একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কর্মদক্ষতাঃ
একজন সুস্থ ব্যক্তি তার দৈনিন্দন কর্মগুলো সুন্দরভাবে শেষ করতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং কর্মদক্ষতাও বৃদ্ধি করে। তাই একজন সুস্থ মানুষের জন্য কর্মদক্ষতা ঠিক রাখার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখা জরুরী। কর্মদক্ষতা মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য।
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাঃ
আপনি যদি মানসিকভাবে সুস্থু হন তাহলে আপনি সহজেই আপনার চিন্তাগুলোকে উন্নত করতে পারবেন। সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
মানসিক সমস্যার লক্ষণঃ
মানসিক সমস্যা ব্যক্তি জীবনে সবচেয়ে কষ্ট এবং হতাশা বেয়ে আনে। মানসিক সমস্যা ব্যক্তি মানসিক ও শারিরীক সমস্যার উপর নির্ভর করে। মানসিক সমস্যার প্রধান লক্ষণগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
আবেগগত লক্ষণঃ
আবেগ হল মানুষের অভ্যন্তরীণ অনুভূতি বা মানসিক প্রতিক্রিয়া। যা বিভিন্ন পরিস্থিতি, ঘটনা, বা মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরির সময় প্রকাশ পায়। আবেগ আমাদের আচরণ, চিন্তাভাবনা এবং শারীরিক প্রতিক্রিয়ায় বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে থাকে। আবেগ একটি প্রাকৃতিক কাজ। যা প্রকৃতভাবে মানুষের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার ফলাফল প্রকাশ করে থাকে।
অতিরিক্ত উদ্বেগঃ
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না। মানুষের জীবনে কিছু কিছু সময় অতিরিক্ত উদ্বেগ কাজ করে। যে উদ্বেগ অনেক সময় একজন মানুষের জন্য হয়ে ওঠে অভিশাপ। যা পরবর্তী জীবন-যাপনকে বিষেশভাবে প্রবাহিত করে। মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য নিম্নের বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই দরকার।
বিষন্নতাঃ
বিষন্নতা প্রতিটি মানুষের জীবনেই কখনো না কখনো আসে। তবে যদি সেটির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং আপনি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছেন, তাহলে এর জন্য আপনার প্রয়োজন নিজের প্রতি অতিরিক্ত নজর রাখা এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া। এটি অত্যন্ত জরুরি যে আপনি আপনার অনুভূতিগুলিকে বুঝতে চেষ্টা করছেন। বিষন্নতা ঠিক রাখতে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।
- দীর্ঘ সময় ধরে মন খারপ থাকা।
- হতাশা
- আনন্দের সংবাদ বা কোন ঘটনা শুনলে বা দেখলে আনন্দ না পাওয়া
রাগ বা অস্থিরতাঃ
রাগ বা অস্থিরতা মানুষকে ধ্বংস করে এবং অনেক সময় জীবনকে কঠিন করে তোলে। রাগের কারণে মানুষের কাছে নিজের সম্মান পাওয়া যায় না, বরং সম্পর্কগুলোও নষ্ট হয়ে যায়।
ভয়ঃ
যেকোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভয় পাওয়া আসলে একটি সাধারণ সমস্যা। যখনই কোনো কাজ করতে যাই, তখন সফল হব কিনা সেই নিয়ে দুশ্চিন্তা আমাদেরকে ঘিরে ধরে। তাছাড়া জীবনে যারা ভুত হয়ে জীবন যাপন করেছে, তারা অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছে। তাই জীবন পরিচালনার জন্য মানসিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে এবং সাফল্য অর্জন করতে হবে। এ কারণে ভয় যাতে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। সচেতনভাবে এই বিষয়গুলো ধৈর্যের সঙ্গে সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত।
আত্মবিশ্বাসের অভাবঃ
নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি সফলতার একটি মূল ভিত্তি। যেসব মানুষ জীবনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারেননি, তারা সাধারণত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছেন। জীবনকে এগিয়ে নিতে এবং সাফল্য পেতে হলে আত্মবিশ্বাস অপরিহার্য। এটি আমাদের কর্মদক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের উচিত নিজেদের প্রতি আস্থা রাখা এবং সেই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া।
শারীরিক লক্ষণঃ
শরীর ও মন যদি ভালো থাকে, তাহলে সবকিছুই ঠিকঠাক চলে। শরীর যদি ভালো না থাকে, তাহলে সাধারণত আমাদের মনও ভালো থাকবে না। আবার এর উল্টো ঘটনাও ঘটে; যখন মন ভাল নেই, তখন শরীরের স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হয়। তাই বলা যায়, শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক এবং সম্পর্কিত। একজন সুস্থ মানুষ হলেই কেবল জীবনের অন্য খাতগুলোতে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। এজন্য আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন থাকতে হবে।
ঘুমের সমস্যাঃ
ঘুম ঠিকঠাক না হলেই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কারণ একজন মানুষের প্রতিদিন পর্যাপ্ত এবং মানসম্পন্ন ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর ঘুম মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে আপনাকে নিয়মিত রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। নিয়মিত এবং সঠিকভাবে ঘুম না হলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলবে।
খাবারের প্রতি অনিহাঃ
একজন সুস্থ মানুষের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরি। কিন্তু এই খাবার গ্রহণে আপনার অনিহা হলেই সমস্যা। সঠিক খাদ্যাভাস মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।
শারীরিক অসুস্থতাঃ
শারীরিক অসুস্থ হলে নিচের সমস্যাগুলো দেখা দেয়-
- মাথা ব্যাথা
- বুক ধড়ফড় করা
- শারীরিক ক্লান্তি
- হজমের সমস্যা বা পেটের সমস্যা
- মাংস পেশী ব্যাথা
- মাথা ঘোড়া
- বমি ভাব
- ঘুম কম হওয়া
- অতিরিক্ত শরীরির দূর্বল হওয়া
শারীরিক দূর্বলতাঃ
শরীর অতিরিক্ত দূর্বল দেখা দিলে কোন কাজেই সহজেই মন বসে না। সব সময় ক্লান্ত অনুভব হলে কোন কাজেই সহজে মন বসে না।
আচরণগত লক্ষণঃ
মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির অন্যতম কারণ হলো আচরণ। আচরণের মাধ্যমে সহজেই একজন মানুষের সুস্থতা বোঝা যায়। যদি কারো আচরণ অন্য আট-দশটা মানুষের থেকে আলাদা হয় তাহলে তাকে অস্বাভিক বা মানসিক রোগী বলে সবাই ইঙ্গিত করে থাকে। যে যে আচরণ মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে –
নিজেকে একা ভাবাঃ
নিজেকে সবার কাছ থেকে এড়িয়ে চলা। পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের থেকে নিজেকে এড়িয়ে চলা। নিজেকে বড় একা ভাবা।
স্বাভাবিক কার্যকলাপে আগ্রহ হারানোঃ
যে সকল কাজ আপনার আগে করতে ভাল লাগত। সে সকল কাজ আপনার এখন করতে ভালো লাগে না। মানসিক স্বাস্থ্য টিকে রাখার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। যা আপনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করতে হবে।
মাদকাশক্তিঃ
এলকোহল, মদ্যপান ও অন্যান্য নেশার কারণে সহজেই মানুষ মনসিক সমস্যায় ভুগে।
আচরণ পরিবর্তনঃ
হঠাৎ করে সবার সাথে খারাপ আচরণ করা। যে কারো সাথে যেকোন বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় অতিরিক্ত কথা বলা। বিপদজনক কাজগুলো বেশি বেশি করা। অতিরিক্ত রেগে যাওয়া। রাগের মাথায় ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া।
আত্মহত্যার চিন্তাঃ
ঠুককো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। নিজেকে অতিরিক্ত দোষী ভাবা। মৃত্যুর কথা বার বার চিন্তা করা এবং আত্মহত্যা করার প্রবনতা।
FAQS-
শেষ কথাঃ
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য নিজের শীরের যত্ন করতে হবে। নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য পেতে সতেজ মন ডট কমের সাথেই থাকুন।
Pingback: দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার ৭ টি সহজ উপায় - Sotej Mon
Pingback: মানসিক চাপ কি? কিভাবে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ মোকাবিলা করবেন? - Sotej Mon