কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। কর্মজীবনের সাথে মানসিক চাপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পারিবারিক কর্মের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের কর্মক্ষেত্রে রয়েছে মানসিক চাপের পরিমাণ বেশি। প্রতিদিনের কাজের চাপ, ডেডলাইন, অফিসের জটিল রাজনীতি এসব কারণে একজন মানুষের কর্মজীবনে মানসিক চাপকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। মানসিক চাপ শুধু আপনার পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলে না, বরং ব্যক্তিগত জীবনকেও অস্থির করে তুলতে পারে। সঠিক উপায়ে স্ট্রেস মোকাবিলা করতে না পারলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় রোগ হলো মানসিক রোগ। মানসিক চাপের মত ভয়ংকর রোগ কেউ নজরে নেই না।
বরং এই রোগের বিষয়ে কারো সাথে কোন বিষয় শেয়ার করে না। একজন মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যাক্তি নিজের ভেতরে সমস্ত চাপ রেখে তিলে তিলে নিজেই নিজেকে শেষ করে ফেলে। এই পোস্টে আমরা কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এবং নিজেকে মানসিকভাবে সতেজ রাখার কিছু কার্যকর কৌশল শেয়ার করব। আশা করি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে খেয়াল রাখলে আপনার জীবন হয়ে উঠবে আরও প্রাণবন্ত। তবে এই বিষয়ে জানার আগে আমরা একটু গবেষণা থেকে পাওয়া কিছু তথ্য দেখে নেই যা আমাদের জনা অত্যন্ত জরুরী-
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর গবেষণা মতে- প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন, অর্থাৎ প্রায় ৯৭০ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের মানসিক ব্যাধি নিয়ে বসবাস করছে। ২০২০ সালে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে উদ্বেগ এবং বিষন্নতাজনিত ব্যাধি নিয়ে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। প্রাথমিক অনুমান মাত্র এক বছরে উদ্বেগ এবং বড় বিষণ্নতাজনিত ব্যাধিগুলির জন্য যথাক্রমে ২৬% এবং ২৮% বৃদ্ধি পায়। তথ্যসুত্র- WHO Mental disorders.
বাংলাদেশের স্কুলগামী কিশোর-কিশোরীদের ৭৩.৫ শতাংশ মানসিক চাপের কোনো না কোনো লক্ষণে ভুগছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ মাঝারি মানসিক চাপ এবং ৯ শতাংশ উচ্চ মানসিক চাপের উপসর্গে আক্রান্ত। মেয়েদের মধ্যে মানসিক চাপের হার ৫৮.৭ শতাংশ, যা ছেলেদের তুলনায় (৪১.৩ শতাংশ) বেশি। তথ্য সুত্র– দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
অপর দিকে আমাদের দেশে আত্মহত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অনেকের পরিবারের কারও একই প্রবণতা রয়েছে। গবেষণায় ২ হাজার মানুষের সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জনে ৫ জন আত্মহত্যার চিন্তা করে, আর তাদের মধ্যে ২.৫ শতাংশ তা বাস্তবায়ন করে। তথ্যসূত্র- নিউজ বাংলা ২৪
মিজ ফেরদৌস বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বাড়ছে, কিন্তু নানা ধরণের বিষণ্ণতা এবং অবসাদ কিংবা আত্মহত্যার মত ঘটনাও বাড়ছে। তথ্যসূত্র- বিবিসি বাংলা
উপরোক্ত তথ্য দেখে হয়তো ভাবছেন মানসিক চাপ এতটা ভয়াবহতা অর্জন করেছে। মানসিক চাপ নিয়ে ভয় না পেয়ে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানসিক চাপ সম্পর্কে নিজের জ্ঞান থাকতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নিই মানসিক চাপ কি?
সূচিপত্র
মানসিক চাপ কি?
মানসিক চাপ (Stress) হলো শারীরিক, মানসিক বা আবেগগত প্রতিক্রিয়া যা ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে দদ্ব তৈরি হওয়ার ফলে ব্যক্তির নিজের মধ্যে এক ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মস্তিষ্ক এবং শরীর অতিরিক্ত চাপের কারণে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে অসুবিধা অনুভব করে। মানসিক চাপ শরীরের স্ট্রেস হরমোন (যেমন, কর্টিসল) বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে “লড়াই বা পালিয়ে যাওয়ার” প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে। যদিও কম মাত্রার মানসিক চাপ কখনও কখনও ইতিবাচক হতে পারে, দীর্ঘস্থায়ী বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সাধারণভাবে বলতে গেলে আমরা যখন কোন কাজ বা কোন স্বপ্ন দেখি সেটি পূরণ বা লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনা তখন আমাদের মাঝে মানসিক চাপ তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে অধিক পরিমাণে আবেক তৈরি করে। ফলে এক ধরনের বিষন্নতা কাজ করে। তবে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য জরুরি।
মানসিক চাপের উদাহরণ-
মানসিক চাপ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাক-
১। একজন শিক্ষার্থী এসএসসি সব বিষয়ে এ+ পেয়েছে কিন্ত শুধুমাত্র গণিতে বি পেয়েছে। ফলে ঐ শিক্ষার্থীর মধ্যে মানসিক চাপ বেড়ে যাবে তার মাথায় বিভিন্ন ধরণের চিন্তা আসবে। এক পর্যায়ে সে নিজের জীবনকে শেষ বা আত্মহত্যার মত সিদ্ধান্তে চলে যেতে পারে।
২। স্বামী খুবই অসুস্থ কয়েকটি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও স্বামীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ সময়ে স্ত্রী মানসিক চাপে থাকে। স্বামী সুস্থ না হওয়া অবদি স্ত্রীর ঘুম, খাওয়া-দাওয়া ও বিভিন্ন মানসিক চাপ তৈরি হয়ে থাকে।
মানসিক চাপের কিছু উদাহরণ জেনে নেই-
মানসিক চাপের ফলে পরিবর্তন-
অতিরিক্ত মানসিক চাপ মানুষের মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানসিক চাপের ফলে শারীরিক, আবেগীয় ও আচরণগত বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন ঘটে থাকে।
শারীরিক পরিবর্তন সমূহ-
- মাথাব্যাথা করা
- বুকধরফর করা
- ঘুম না হওয়া
- ঘাম হওয়া
- ডায়রিয়া
- পেট ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়া
- বুকে ব্যাথা
- শ্বাস কষ্ট
- ত্বকের সমস্যা
- পেশীজনিত ব্যাথা
- হজম সমস্যা
- ওজন হ্রাস-বৃদ্ধি করা
- হরমোন পরিবর্তন
আবেগীয় পরিবর্তন সমূহ-
- হতাশা
- অত্যধিক রাগ
- বিরক্ত বোধ
- বিষণ্নতা
- অপরাধ বোধ
- অস্থিরতা
- আত্মবিশ্বাসের অভাব
- কষ্ট অনুভব করা
- উত্তেজনা
- দুশ্চিন্তা
- রাগের পরিবর্তন
- নিজের প্রতি বিরক্তি
- দায়িত্ববোধ থেকে দূরে থাকা
- পরিকল্পনাহীনতা
আচরণগত পরিবর্তন সমূহ-
- দোষারোপ করা
- ঘুম না হওয়া
- অমনোযোগীতা
- অলসতা বা অনীহা
- ভুলে যাওয়া
- চিৎকার চেঁচামেচি করা
- অকারণে হাঁটাহাঁটি করা
- কান্নাকাটি করা
- খাবারে অরুচি
- মাদক দ্রব্য গ্রহণ করা
- সামাজিক সম্পর্কের অবনতি
- সিদ্ধান্তহীনতা
- কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া
- দায়িত্ব এড়িয়ে চলা
মানসিক চাপের কারণ-
মানসিক চাপের কারণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। মানসিক চাপের সবগুলো কারণ নাও পরিলখিত নাও হতে পারে। মানসিক চাপ মূল দুইটি কারণে হয়ে থাকে। একটি হলো অভ্যন্তরীণ কারণ অন্যটি হলো বাহ্যিক কারণ। ঠিক কি কি কারণে মানসিক চাপ হয় সে বিষগুলো নিয়ে এখন আলোচনা করব।
অভন্তরীন কারণ:
- হতাশা জীবনকে শেষ করে ফেলে। মানসিক চাপের বড় একটি সমস্যা।
- অত্যধিক রাগ মানুষকে ধ্বংস করে। কারো রাধ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মানসিক চাপের সম্মুখিন হয়।
- বিরক্ত বোধ একটি মনসিক সমস্যার লক্ষণ। বিরক্ত বোধ হলে মানুষের সাথে খারাপ আচরণ হয়।
- বিষণ্নতা মানুষকে নিঃশেষ করে ফেলে। বিষণ্নতা মানসিক চাপের একটি বড় লক্ষণ।
- অপরাধ বোধ স্বাভাবিক কর্ম কিন্তু এটি অতিরিক্ত হলে মানুষ মানসিক চাপের সম্মুখিন হয়।
বাহ্যিক কারণ:
- অন্যকে অহেতুক দোষারোপ করা।
- কেউ কোন কিছু বললে ভুলে যাওয়া। কোথায় কোন জিনিস রাখলে ভুলে যাওয়া। যা মানসিক চাপের কারণে হয়।
- যে কোন কাজে অলসতা। কাজে মন না বসা।
- দায়িত্ববোধ এড়িয়ে চলা। গুগুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো এড়িয়ে চলা। অতিরিক্ত ব্যস্তা দেখানো।
মানসিক চাপের কারণ সম্পর্কে কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো-
পারিবারিক সম্পর্কের অভাব-
পরিবার হলো মানুষের বসবাসের স্থান। একটি আবেগীক সম্পর্কের প্রাণকেন্দ্র। যেখানে পরিবারের সকল সদস্য পরস্পরের প্রতি ভালাবাসা, শ্রদ্ধা ও ভক্তির মাধ্যমে বসবাস করে। অনেক সময় পরিবারে মতের অমিল তৈরি হয়। মতের মিল না হওয়ার কারণে পরস্পরকে ভুল বোঝাবুঝি জায়গা তৈরি হয়। ফলে আবেগময়ী জীবনের মানসিক চাপ তৈরি হয়।
কলহ-
কলহ বা ঝগড়া মানসিক চাপ তৈরি করে থাকে বেশি। যদি কারো সাথে আপনার কিছু কথা কাটাকাটি হয় । কিছু অপ্রিয় বাক্য রাগের মাথায় বলে ফেলেন তাহলে সেই বাক্যগুলো বার বার আপনার মনে বাজতে থাকে। এক পর্যায়ে আপনি মানসিক চাপে থাকেন। মানুষ চলার পথে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, জাতিগত, প্রাগত ইত্যাদি ক্ষেত্রে কলহে আমাদের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।
বেকারত্ব-
একজন ব্যক্তি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি বা কাজ না পায় তখন সে নিজেকে অযোগ্য ভাবে। চাকুরি না পেলে পারিবারিক, সামাজিক বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মখিন হতে হয়। এক পর্যায়ে কাঙ্খিত কাজ না পাওয়ার কারণে সে মানসিক চাপ অনুভব করে।
পারিপার্শ্বিক-
পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। যেমন, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, যানজট, তীব্র আলো, কক্ষে অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল, অপরিছন্ন পরিবেশ ইত্যাদি কারণে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়।
মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা-
মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে বর্তমান জীবনের দ্রুতগতির চাহিদার প্রেক্ষাপটে। সঠিক কৌশলে চাপ নিয়ন্ত্রণ করা হলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়ই ভালো থাকে। এখানে মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকর কৌশল উল্লেখ করা হলোঃ
যেভাবে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ মোকাবিলা করবেন-
কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ এক অতি সাধারণ সমস্যা। এ সমস্যাগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। কাজের চাপ, ডেডলাইন, সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক, অফিসের পরিবেশ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এই চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এই চাপ দীর্ঘদিন ধরে থাকলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিচের কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যেতে পারেঃ
স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনঃ
একজন ব্যক্তি মানসিক চাপ কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন খুবই জরুরি। স্বাস্থকর জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজন কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা।
- পর্যাপ্ত ঘুমঃ প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করা।
- সুষম খাদ্য গ্রহণঃ নিয়মিত ফল, শাক সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খান।
- ব্যায়ামঃ প্রতিদিনি রুটিন করে হাঁটা, দৌড়ানো ও ব্যায়াম করতে হবে।
- পানি পানঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
মনোযোগঃ
প্রতিদিনের কাজে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সব কাজই সফল হওয়া যায়। মানসিক চাপ কমানোর জন্য আপনাকে অফিস বা কর্মক্ষেত্রে অনেকগুলো কাজ একসাথে না করে একটি কাজ মনোযোগ দিয়ে করে দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে।
- একটি কাজঃ যখন কাজ করবেন একটি কাজ করার চেষ্টা। একাধিক কাজ একবারে করতে গেলে মানসিক চাপ তৈরি হবে।
- বিরতিঃ একাধারে একটি কাজ করলে মস্তিস্কে অধিক পরিমাণে চাপ পড়বে। এর জন্য আপনাকে কাজের মাঝে ছোট ছোট বিরতি নেওয়া।
- মনোযোগ অন্য দিকে নেওয়াঃ যখন কাজ করার সময় চাপ অনুভব করবেন তখন অন্য কোন কাজের মনোযোগ দিন।
কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তনঃ
- সহকর্মীর সাথে কথাঃ আপনার কর্মস্থলে কোন সমস্যা হলে ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর সাথে কথা বলুন। সে সমাধানের উপায় বলবে।
- সুপারভাইজারের সাথে অলোচনাঃ আপনার সুপারভাইজারের সাথে কাজের চাপ নিয়ে আলোচনা করুন।
- কর্মস্থান পরিবর্তনঃ যদি সম্ভব হয় তাহলে কর্মস্থান পরিবর্তন করুন।
বিরতি নিনঃ
দীর্ঘক্ষণ কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে ছোট বিরতি নিন। বিরতির ফলে কাজে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। ৫-১০ মিনিটের হাঁটা, গভীর শ্বাস নেওয়া বা চোখ বন্ধ করে বসে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। মাঝে মাঝে সহকর্মীদের সাথে মজার গল্প করুন।
সময়ের কাজ সময়ে করুনঃ
কর্মস্থলে কোন কাজ পরে করব বলে অলসতায় ফেলে রাখবেন না। কারণ পরবর্তীতে আপনার উপর মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে পারে। অনেকগুলো কাজ এক সাথে করতে গেলে কাজে ভুলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। তাই যত সম্ভব দৈনিক নিয়ম করে কাজের চাপ কমানের জন্য প্রতিদিনের কাজ শেষ করুন। ফলসরূপ আপনার উপর কোন ধরণের মানসিক চাপ পড়বে না।
স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনঃ
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে মানসিক চাপ মোকাবিলায় সহায়ক হবে। সুস্থ দেহে কাজের চাপ কম অনুভূত হয়। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে ঘুমাতে হবে।
আত্মবিশ্বাসঃ
নিজের কাজের প্রতি আস্থা রাখুন এবং নিজের দক্ষতায় বিশ্বাস রাখুন। নিজের কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন, যাতে মানসিক চাপ কম অনুভূত হয়। আপনি যে কাজ দ্রুত শেষ করতে পারবেন সে কাজ দ্রুত শেষ করুন। আমি পারবই এই মনোবল গগে তুলুন।
‘না’ বলার অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ
আপনি যদি অতিরিক্ত কাজ নিতে না চান, তাহলে সুস্থভাবে ‘না’ বলতে শিখুন। এতে আপনার কাজের চাপ কমবে এবং মানসিক স্বস্তি বজায় থাকবে। অনেকে লজ্জার কারণে সহকর্মীর টুকিটাকি কাজ করে দেওয়ার অভ্যাস আছে। কিন্তু যদি এই কাজ আপনি নিতে না চান তাহলে সরাসরি আপনার সহকর্মীকে বলে দিন যে আপনার হাতে যে কাজ আছে শেষ হতে অনেক বিলম্ব হবে।
FAQs:
মানসিক চাপ কি?
মানসিক চাপ (Stress) হলো শারীরিক, মানসিক বা আবেগগত প্রতিক্রিয়া যা ব্যক্তির চাহিদা ও ক্ষমতার মধ্যে দদ্ব তৈরি হওয়ার ফলে ব্যক্তির নিজের মধ্যে এক ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মস্তিষ্ক এবং শরীর অতিরিক্ত চাপের কারণে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে অসুবিধা অনুভব করে। মানসিক চাপ শরীরের স্ট্রেস হরমোন (যেমন, কর্টিসল) বৃদ্ধি করে, যা শরীরকে “লড়াই বা পালিয়ে যাওয়ার” প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ কমাতে কি করা উচিত?
পর্যাপ্ত ঘুমঃ প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করা।
সুষম খাদ্য গ্রহণঃ নিয়মিত ফল, শাক সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খান।
ব্যায়ামঃ প্রতিদিনি রুটিন করে হাঁটা, দৌড়ানো ও ব্যায়াম করতে হবে।
পানি পানঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
মানসিক চাপ ও এর কারণ কি?
মানসিক চাপের কারণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। মানসিক চাপের সবগুলো কারণ নাও পরিলখিত নাও হতে পারে। মানসিক চাপ মূল দুইটি কারণে হয়ে থাকে। একটি হলো অভ্যন্তরীণ কারণ অন্যটি হলো বাহ্যিক কারণ।
পড়ালেখা করলে কি মানসিক চাপ কমে?
পড়ালেখা করলে মানসিক চাপ কমে যায় কারণ। পড়ালেখার মাধ্যমে নতুন নতুন তথ্য জানা যায় এবং জ্ঞান অর্জন করা যায়।
দুশ্চিন্তা করলে কি কি সমস্যা হয়?
দুশ্চিন্তা করলে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন, শ্বাস কষ্ট, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং কখনও কখনও উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের সমস্যা হওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মানসিক সমস্যা কেন হয়?
হতাশা জীবনকে শেষ করে ফেলে। মানসিক চাপের বড় একটি সমস্যা।
অত্যধিক রাগ মানুষকে ধ্বংস করে। কারো রাধ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে মানসিক চাপের সম্মুখিন হয়।
বিরক্ত বোধ একটি মনসিক সমস্যার লক্ষণ। বিরক্ত বোধ হলে মানুষের সাথে খারাপ আচরণ হয়।
বিষণ্নতা মানুষকে নিঃশেষ করে ফেলে। বিষণ্নতা মানসিক চাপের একটি বড় লক্ষণ।
অপরাধ বোধ স্বাভাবিক কর্ম কিন্তু এটি অতিরিক্ত হলে মানুষ মানসিক চাপের সম্মুখিন হয়।
কোন বয়সের মানুষ মানসিক চাপে বেশি ভোগে?
১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা মাঝারি থেকে গুরুতর মানসিক চাপ, বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের উপসর্গগুলিতে ভুগছেন।
কিভাবে বুঝবো আমি মানসিক রোগী?
এমন কিছু লক্ষণ যেমন অকারণে মন খারাপ থাকা, সহজে রেগে যাওয়া, নিজেকে অন্যদের থেকে দূরে রাখা, সামাজিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা বা একা একা কথা বলা ইত্যাদি মানসিক অসুস্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে। অধ্যাপক মেখলা সরকার জানিয়েছেন, সিজোফ্রেনিয়া, মুড ডিজঅর্ডার বা বাইপোলারের মতো গুরুতর মানসিক অসুস্থতা বাহ্যিক লক্ষণ থেকেই শনাক্ত করা সম্ভব।
কোন লিঙ্গের মানসিক চাপ বেশি?
নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি মানসিক চাপে থাকে।
মানসিক চাপে কতজন মারা যায়?
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ স্ট্রেস রিপোর্ট প্রদান করেছে যে প্রতি বছর 120,000 মানুষ মারা যায় কাজের চাপে মানসিক সমস্যা ভোগা মানুষ।
চা খেলে কি মানসিক চাপ কমে?
চা পান করার সাথে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিম্ন স্তরের সম্পর্ক রয়েছে । নিয়মিত চা পানকারীদের ডিমেনশিয়া এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কম থাকার পাশাপাশি আরও ভাল জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা পেয়ে থাকে। অনেক গবেষণায় চা উদ্বেগের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে বলে প্রমানিত।
মানসিকভাবে সুস্থ মানুষের চারটি লক্ষণ কি কি?
ভাল লাগা, ভয়, রাগ, প্রেম, ঈর্ষা, অপরাধবোধ বা উদ্বেগের মতো আবেগ কমে যাওয়া। নিজের মন প্রফুল্ল লাগা। সব সময় ভাল অনুভব করা।
তিনটি সাধারণ মানসিক রোগ কি?
তিনটি সাধারণ রোগ নির্ণয় হল উদ্বেগজনিত ব্যাধি, বিষণ্নতা এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD)।
শেষ কথাঃ
মানসিক চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য উপরোক্ত আলোচনা থেকে বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করুন। আপনি আপনার আচরণ ও বহ্যিক দিক বিবেচনা করে দেখুন উপরোক্ত কোন উক্তিগুলো আপনার জন্য অনেক শ্রেয়। বর্তমানে মানসিক চাপ মোকাবেলা করা খুবই জরুরী। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে মন ও শরীর উভয় ভাল থাকে- সতেজ মন।